আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধি জিনিসটা কী?

আজকের বিশ্বে প্রযুক্তি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন নতুন প্রযুক্তির সংস্পর্শে আসছি।সেই ধারাবাহিকতায় বর্তমানের সবচেয়ে বেশি যে প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে তা হল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ।
কম্পিউটার সায়েন্সের একটি বুমিং প্রযুক্তি হ'ল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যা বুদ্ধিমান মেশিন তৈরি করে বিশ্বে একটি নতুন বিপ্লব তৈরি করতে যাচ্ছে। কম্পিউটার বিজ্ঞানে যে ক্ষেত্রটি সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং সর্বজনীন এবং যার ভবিষ্যতে বিশাল সুযোগ রয়েছে তা হল এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ।
তাহলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জিনিসটা কি?
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দুটি ইংরেজি শব্দ আর্টিফিশিয়াল এবং ইন্টেলিজেন্স মিলে গঠিত একটা পরিভাষা, যেখানে আর্টিফিশিয়াল দিয়ে "ম্যান-মেইড" বা "মনুষ্যসৃষ্ট," এবং ইন্টেলিজেন্স দিয়ে "থিঙ্কিং পাওয়ার" বা "চিন্তা শক্তি" বুঝায়, তাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অর্থ হল "ম্যান-মেইড থিঙ্কিং পাওয়ার" বা "মনুষ্যসৃষ্ট চিন্তা শক্তি" এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কে সংক্ষেপে এআই বলা হয়।
জিনিসটা কি? তারপরও পরিস্কার না।
তাহলে আসুন সহজে বলিঃ
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স হল কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা যার মাধ্যমে আমরা বুদ্ধিমান মেশিন তৈরি করতে পারি যা মানুষের মতো আচরণ করতে পারে, মানুষের মতো চিন্তা করতে পারে এবং মানুষের মতো সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়।"
এক কথায় মেশিন কে মানুষের সমান বুদ্ধিমত্তা দেয়ার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং হল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। মানুষ যেরকম বুদ্ধিমান, মেশিন কে সেইরকম বুদ্ধিমান করার যে মহাযজ্ঞ সারা বিশ্ব জুড়ে চলছে তার নাম আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
বুঝলাম আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মাধ্যমে বুদ্ধিমান মেশিন তৈরি করে ত আমি কি তা ব্যাবহার করি বা করতে হবে?
হ্যা আমি আপনে এর ব্যাবহার করা শুরু করে দিছি এবং এর উপকারও পাইতেছি।
কিভাবে?
আপনে দেখবেন যে আপনার পার্সোনাল মেইল বক্সে স্পাম মেইল জমা হয় না তা জমা হয়্ আলেদা স্পাম ফোল্ডারে। কেন তাদের জন্য স্পাম ফোল্ডার রয়েছে, মেইল টা যে স্পাম মেইল সেটাই বা সিস্টেম কিভাবে বের করে — তারপর সেই মেইল কে স্পাম ফোল্ডার এ জমা করে? হ্যা, এই কাজটিই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স করে।
আবার আমরা জিমেইল এ মেইল লিখার সময় কিছু শব্দ লিখলে পরের শব্দ সাজেস্ট করা, মেইল পেলে কুইক রেস্পন্স করতে কিছু এক্সপ্রেশন সাজেস্ট করা, আপনার মেইল বডিতে attached বা attachment শব্দটি লেখা অথচ আপনে কোন ফাইল এটাচট করেনি তাহলে একটা এলার্ট মেসেজ দেখানো ইত্যাদি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ছোট ছোট কিছু উদাহরন।
অন্যদিকে ইউটিউব বা নেটফ্লিক্স এ খেয়াল করলে দেখবেন যে আপনি একটা ভিডিও , সিনেমা, টিভি সিরিজ দেখলে তারা সেই একই ক্যাটাগরির বা একই ধরনের কনটেন্ট আছে এরকম আরো ভিডিও, সিনেমা, টিভি সিরিজ সাজেস্ট করে । কিভাবে? এই কাজটিও করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
এভাবে হোটেল বুকিং সাজেস্ট, প্রোডাক্ট সাজেস্ট সহ আরো এরকম কয়েকশ ক্ষেত্রে আজ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার হচ্ছে।
গুগল এসসিটেন্স, সিরি, কর্টানা হল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বর্তমানে বড় উদাহরন।
বুদ্ধিমান মেশিন কেন দরকার?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে শেখার আগে আমাদের জেনে রাখা উচিত যে এআই এর গুরুত্ব কী এবং কেন এটি আমাদের শেখা উচিত। এআই সম্পর্কে জানার কয়েকটি প্রধান কারণ নিম্নলিখিত:
এআই এর সহায়তায়, আপনি এমন সফ্টওয়্যার বা ডিভাইস তৈরি করতে পারেন যা বাস্তব সমস্যার সমাধান খুব সহজেই এবং নির্ভুলতার সাথে করতে পারেন যেমন স্বাস্থ্য সমস্যা, বিপণন, ট্র্যাফিক সমস্যা ইত্যাদি ইত্যাদি।
এআই এর সাহায্যে আপনি নিজের ব্যক্তিগত ভার্চুয়াল সহকারী যেমন কর্টানা, গুগল সহকারী, সিরি ইত্যাদি তৈরি করতে পারেন
এআই-এর সহায়তায় আপনি এমন রোবট তৈরি করতে পারেন যা এমন পরিবেশে কাজ করতে পারে যেখানে মানুষের বেঁচে থাকার ঝুঁকি হতে পারে।
অন্যান্য নতুন প্রযুক্তি, নতুন ডিভাইস এবং নতুন সুযোগের জন্য এআই পথ উন্মুক্ত করে।
কৃত্রিম বুদ্ধি দুটি লক্ষ্য?
1. এক্সপার্ট সিস্টেম তৈরি করা - যে সিস্টেমগুলি বুদ্ধিমান আচরণ প্রদর্শন করে, ব্যবহারকারীদের শিখতে, প্রদর্শন করতে, ব্যাখ্যা করতে এবং তাদের ব্যবহারকারীদের পরামর্শ দেয়।
২. মেশিনগুলিতে হিউম্যান বুদ্ধি প্রয়োগ করা - এমন সিস্টেম তৈরি করা যা মানুষের মতো বোঝে, চিন্তা করে, শিখে এবং আচরণ করে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইতিহাস —
দেখে মনে হতে পারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এই সেদিন এর আবিষ্কার । এতে সন্দেহ নেই গত ২-৩ বছরে এই ফিল্ড এ অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে , যদিও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এখন প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় কিন্তু এই বিষয়টি অনেক পুরাতন, এমনকি কম্পিউটার আবিষ্কারেরও আগে। আসলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নানা রকম গবেষণা শুরু সেই ১৯৪০ থেকে। মেশিন কে কিভাবে মানুষের মত চিন্তা শক্তি’র ক্ষমতা দেয়া যায় সেটা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে কম্পিউটার আবিষ্কার হবার পূর্বেই , কম্পিউটার আবিষ্কার এর পর এই ক্ষেত্রের পরিধি শুধু বৃদ্ধি পেয়েছে । একদম স্পেসিফিক টাইমলাইন যদি বলি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সেই গ্রিক সময় থেকেই আছে!
তবে সভ্য জগতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে’র পর পরই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর কাজ শুরু হয় । ইংরেজ গণিতবিদ Alan Turing ১৯৪৭ সালে সর্বপ্রথম আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে বক্তব্য দেন । মুটোমুটি ওই সময় থেকেই বিজ্ঞানি গণ নিজ উদ্যোগ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন ।
এআই গবেষণা ক্ষেত্র ১৯৫৬ সালে ডার্টমাউথ কলেজের একটি কর্মশালায় প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
মার্চ ২০১৬ এ, আলফাগো গো চ্যাম্পিয়ন লি সেডোলের সাথে একটি ম্যাচে ৫টি গেমের মধ্যে ৪টিতেই জিতে নেয়, হ্যান্ডিক্যাপস ছাড়াই একজন পেশাদার গো খেলোয়াড়কে পরাজিত করার জন্য প্রথম কম্পিউটার গো-সিস্টেমিং পদ্ধতিতে পরিণত হয়। ভবিষ্যতের গো সম্মেলনের ২০১৭ আলফাগো কে জেইয়ের সাথে তিনটি খেলায় জিতেছে যিনি ক্রমাগতভাবে দুবছর ধরে বিশ্বের এক নম্বর রেঙ্কিং অর্জন করেছিল।