রামাদান ১৯- ই'তেকাফ কি, ই'তেকাফের বিধান ও শর্তাবলী
৩০ দিনের ৩০ টি বিষয়ের সংক্ষিপ্ত আলোচনার মাধ্যমে ইসলামকে জানা - রামাদান ২০২১
ই'তেকাফের সংজ্ঞাঃ
উহার আভভধানিক অর্থ হলঃ কোন বস্তুর স্থীতিশীলতা ও আবশ্যকতা, বিচ্ছিন্নতা, নি:সঙ্গতা।
শরীয়তের পরিভাষায়ঃ আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের উদ্দেশ্যে নিজেকে মসজিদে আবদ্ধ ও অবস্থান করে আল্লাহর জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে ইবাদত করা।
কেন ইতেকাফ করতে হয়:
পরহেজগার বান্দার মসজিদে (নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত) অবস্থান করে নেকীর কাজ করা ও হারাম বর্জন করার মধ্যে প্রমাণ পাওয়া যায় যে সে আল্লাহকে ভালোবাসে, তাঁর সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করে। তার কাছেই চিরস্থায়ী জান্নাতের মধ্যে সওয়াব কামনা করে। বস্তুত ইহা আল্লাহর নৈকট্য ও আনুগত্য। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَعَهِدْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَنْ طَهِّرَا بَيْتِي لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ
‘‘আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলের নিকট এই মর্মে আদেশ দিলাম যে, তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ই'তেকাফকারী, এবং রুকু সেজদাকারীদের জন্য পূত-পবিত্র করে রেখ।’’ (বাকারা-১২৫)
ই'তেকাফের বিধানঃ
ইহা সুন্নাত। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমযানের শেষ দশকে নিয়মিত এই ই'তেকাফ করেছেন। সাহাবীগণও তাঁর সাথে ও তাঁর তিরোধানের পর ই'তেকাফ করেছেন। মান্নাত ছাড়া ইতেকাফ ওয়াজেব নয়। অর্থাৎ কেউ যদি মান্নত করে তবেই তা ওয়াজেব হবে নতুবা তা সর্বদা সুন্নাত হিসাবে গণ্য। দলীল নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
(مَنْ نَذَرَ أَنْ يُطِيعَ اللَّهَ فَلْيُطِعْهُ)
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করার নযর করবে, সে যেন তার আনুগত্য করে। (বুখারী হা/৬৬৯৬)
ই'তেকাফ বিশুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলীঃ
- উহা বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য ৫টি শর্ত রয়েছেঃ
- ইসলাম
- নিয়ত
- বিবেক সম্পন্ন হওয়া
- গোসল ওয়াজেব কারী বিষয় (বড় নাপাকী, হায়েয ও নেফাস) হতে মুক্ত থাকা। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّى تَغْتَسِلُوا ‘‘এবং অপবিত্র অবস্থায় (ছালাতের নিকটবর্তী হবে না) যতক্ষণ পর্যন্ত গোসল না করবে। কিন্তু যদি (মসজিদের ভিতর দিয়ে) পথ অতিত্রুম কর তবে সে কথা ভিন্ন। অর্থাৎ তখন নাপাক অবস্থায় যাওয়া যাবে। (সূরা নি-৪৩)
মসজিদের মধ্যে হতে হবে দলীলঃ আল্লাহ বলেন,
وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ
‘‘এবং যখন তোমরা মসজিদে এ'তেকাফ অবস্থায় (তখন স্ত্রী সহবাস কর না।) (সূরা বাকারা- ১৮৭)
তাছাড়া রাসূল (সা.), তাঁর সাহাবীগণ এমনকি নবী (সা.) এর স্ত্রীগণও মসজিদের মধ্যে এতেকাফ করেছেন।
কখন ইতেকাফ শুরু হবে:
বিশ রামাদ্বানের সূর্য অস্ত যাওয়ার কিছুক্ষণ পূর্ব থেকে ইতেকাফ শুরু হবে। আর শেষ হবে রামাদ্বান শেষ হয়ে ঈদের চাঁদ উঠা পর্যন্ত।
ইতেকাফের নিম্ন সময়:
উলামাগণ বলেছেন, ই’তেকাফের জন্য নিম্ন কোন সীমা নেই। (হানাফী, শাফেঈ, হাম্বলী মাযহাবের উলামাগণ এই মত পোষণ করেছেন। ইমাম শাওকানী, ইবনে বাযও তাঁদেরকে সমর্থন করেছেন। ইবনে আবদুল বার বলেছেন, এই মন্তব্য হচ্ছে অধিকাংশ ফিকাহবিদদের) তবে কমপক্ষে এক দিন এক রাত হওয়া উত্তম।
ই'তেকাফকারীর জন্য মুসতাহাব বিয়ষঃ
আনুগত্যশীল (ইবাদতের) কাজে নিয়োজিত থাকা এবং অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা।
ই'তেকাফকারীর জন্য যা বৈধঃ
একান্ত প্রয়োজনীয় কাজে বের হওয়া তার জন্য জায়েয। যেমন পবিত্রতা অর্জন (ওযু-গোসল)। পানাহার করা (যদি কেউ তা তার নিকট না নিয়ে আসে) পেশাব, পায়খানা, তার স্ত্রী তার সাথে দেখা করতে পারে ও তার সাথে কথাও বলতে পারে। অন্য মানুষও তার কাছে দরকার থাকলে যেতে পারে তার সাথে কথাও বলতে পারে, তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলবে না।
যা দ্বারা এ'তেকাফ বাতিল হয়ঃ
- স্ত্রী মিলন করলে।
- স্ত্রী আলিঙ্গনের মাধ্যমে বীর্যপাত করলে। (স্বপ্ন দোষ হলে কোন অসুবিধা নেই।)
- বিনা প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হলে।